আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক গাঙ্গেয় তটভূমি অম্বিকা কালনা। ষষ্ঠ শতকে ‘কূজিকা তন্ত্রে অম্বুয়া নামে পরিচিত কালনার পবিত্র ভূমিতে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়ে আছে ইতিহাস। লক্ষ লক্ষ টন শব্দ খনিজ চাপা পড়ে আছে গাঙ্গেয় পলির আস্তরণে। ‘অম্বিকা কালনা : মা মহিষমর্দ্দিনী’ শীর্ষক বইটি সেই ইতিহাস, সেই লৌকিক মহাগাথা, সেই সামাজিক মহাক্ষেত্র অন্বেষণে ব্রতী হয়েছে যা কালনার অন্যতম প্রাচীন সার্বিক মহোৎসব – মহিষমর্দ্দিনী পূজাকে ঘিরে রয়েছে। এই বই মা মহিষমর্দ্দিনী পূজার পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও লৌকিক প্রেক্ষাপটকে জনসমক্ষে তুলে ধরবে। কালনার ঐতিহ্য, ধর্মীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত মহিষমর্দ্দিনী পূজা কালনায় সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রকে সুদীর্ঘকাল থেকে পরিপুষ্ট করে আসছে – যা এই পূজার বৈশিষ্ট্য। মা মহিষমর্দ্দিনীর উপর বই প্রকাশের সার্থকতা এখানেই।
স্থানীয় ইতিহাস চর্চায়, আঞ্চলিক লোক সংস্কৃতি অন্বেষণে এই বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনা করবে এই আশা রাখি। আধ্যাত্ম সাধনার পূণ্যভূমি অম্বিকা কালনার মা মহিষমর্দ্দিনী পূজার লিপিবদ্ধ ইতিহাস জাতির সভ্যতা বিকাশের আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটকে আংশিক বা সার্বিকভাবে সাহায্য করবে – এই পূর্ণ বিশ্বাস মা মহিষমর্দ্দিনীর পদকমলে অর্পণ করলাম।
সুমাল্য দাস
- পেশায় ইংরাজী ভাষার শিক্ষক (এম.এ; বি.এড; ডি.ই.এল.টি) এবং সাংবাদিকতার জন্য জেলায় পরিচিত মুখ। শতাব্দী প্রাচীন ‘পল্লীবাসী’তে সাংবাদিকতায় হাতেঘড়ি বর্তমানে পল্লীবাসী, সাম্প্রতিক, হোত্রী, শিক্ষা ও সাহিত্য, সংঘসাথী, দৈনিক মুক্তবাংলাতে নিয়মিত প্রবন্ধ লেখক। প্রকাশিত হয়েছে লেখকের অনুগল্প সংকলন ‘বৃষ্টি হতে পারে’। তাঁর সম্পাদিত কালনার বিখ্যাত মহিষমর্দ্দিনী পূজার উপর আকরগ্রন্থ ‘মা মহিষমর্দ্দিনী : ধর্মীয় ও লৌকিক ইতিহাস’ লেখকের মৌলিক গবেষণার প্রতি আগ্রহ প্রতিভাত করে। বইটির উচ্চ সাফল্য বর্তমান গ্রন্থের প্রেরণা-প্রবাহ। লেখকের সংকলন ও সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে কৃষ্ণকুমার ভদ্রের ‘শেষস্মৃতি’ এবং কবিতা সংকলন ‘দশমিক’, লেখকের সম্পাদনায় প্রকাশিতব্য প্রখ্যাত সাহিত্যিক অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প সংকলন এবং ভবানী প্রসাদ মজুমদারের নির্বাচিত ছড়া সংকলন। লেখ বর্তমানে সহঃসম্পাদক, এডিটরস্র এণ্ড জার্নালিসট গিল্ড, কালনা এবং সহঃ সম্পাদক, কালনা সংস্কৃতি পরিষদ।মূল্য : ১৫০ টাকা মাত্র(একশত পঞ্চাশ টাকা মাত্র)
**************
শুভেচ্ছাপত্র
আমার পরম স্নেহাস্পদ ছাত্র শিক্ষক শ্রীমান সুমাল্য দাস কালনার মহিষমর্দ্দিনী পূজার একাল ও সেকাল বিষয়ে একটি গ্রন্থ “মা মহিষমর্দ্দিনী : ধর্মীয় লৌকিক ইহিহাস” প্রকাশে উদ্যোগী হয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি সাধু প্রচেষ্টা। মহিষমর্দ্দিনী পূজা ও মেলা শুধু কালনা শহরের নয়, বর্ধমান জেলার অন্যতম ঐতিহ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান। পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে বহু মানুষ এই মেলা দেখতে আসেন। জেলার অন্যতম প্রাচীন ও বিখ্যাত মেলাটি সম্পর্কে কালনাবাসী গৌরব অনুভব করলেও এ বিষয়ে কোন গ্রন্থ প্রকাশে কেউ উদ্যোগী হয়েছে বলে আমার জানা নেই। দেশের প্রায় সকল মেলাই পরবর্তীকাল পর্যন্ত নানাভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তার পুরানো বৈশিষ্ট্য হারিয়ে নবরূপ ধারণ করছে। েএ নিয়ে আক্ষেপের কোন কারণ নেই, কেননা পরিবর্তন কালের ধর্ম। বয়স্ক মানুষদের কাছ থেকে পূর্বকালের পূজো সম্পর্কে নানা কথা শোনা গেলেও তা লিপিবদ্ধ করার কোন প্রচেষ্টা আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। শ্রীমান মুমাল্য দাসের এই প্রচেষ্টা এই অভাবকে পূর্ণ করবে এবং সেই সঙ্গে আঞ্চলিক ইতহাসের একটি পর্বকে সর্বসমক্ষে অনাবৃত করে দেবে। তাঁর এই ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টা কালনার আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকে আরও উৎসাহিত করবে বলে মনে করি। এই প্রচেষ্টার জন্য শ্রীমান সুমাল্যকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।
ড: কমলেশ ভট্টাচার্য
০১.০৫.২০১০
ঘটকপাড়া, কালনা, পূর্ব বর্ধমান