ভার গৌরব তারানাথ তর্কবাচস্পতি (১৮১৮-১৮৮৪) বাংলার তথা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত। বিস্মৃত-প্রায় এই শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত, বহুমুখী প্রতিভাময় এই অনন্য ব্যক্তিত্বর জন্মভূমি অম্বিকা কালনা। তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি ২২ খন্ডে সমাপ্ত ‘বাচস্পত্যবিধান’ (১৮৭০-৮৪) আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে। একক ব্যক্তি লিখিত এত বড় কর্মকাণ্ড যা এক ব্যক্তিক জীবনে এককথায় অসম্ভব। তাঁর ‘শব্দস্তোমমহানিধি’ (১৮৬৯-৭০) অভিধান গ্রন্থটিও সারা বিশ্বে সমাদৃত। মহাবীর চরিত, ’ছন্দোমঞ্জরী’, ‘গয়ামাহাত্ম্য’, ‘গয়াশ্রাদ্ধ পদ্ধতি’, ‘গায়ত্রী ব্যাখ্যা’, ‘মুদ্রারাক্ষস’, ‘বেণীসংহার’, ‘দশকুমার চরিত’, ‘বৃত্তরত্নাকার’, ‘কাদম্বরী’ সহ অসংখ্য গ্রন্থ রচয়িতা তারানাথ লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়ে গেছেন। ১৮৭০ খ্রি: লেখা শেষ গ্রন্থ “শব্দস্তোম মহানিধি” সংস্কৃত ভাষাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্বদ যা পৃথিবীর সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে সংস্কৃত ভাষাচর্চা হয়, সেখানেই পড়ানো হয়। এমন বিরল, মহাপ্রতিভা, ভারত গৌরব পণ্ডিত তারানাথ তর্কবাচস্পতির উপর এই গ্রন্থ সম্পাদনা করার প্রবল ইচ্ছে আমার মধ্যে ঘনীভূত হতে থাকে। অবশেষে শ্রী মানবেন্দ্র পাল, শ্রী যজ্ঝেশ্বর চৌধুরী ও শ্রী সিদ্ধেশ্বর আচার্য্যের লেখাগুলিকে একত্রিত করে এই গ্রন্থ নির্মিত হল। আমি কৃতজ্ঞতা ও ঋণস্বীকার করি ‘বসু প্রকাশনী’ (কালনা)-র কর্ণধার তথা প্রকাশক শ্রী দিলীপ বসুর কাছে। তাঁর পরিবেশনায় এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শ্রী মানবেন্দ্র পাল লিখিত ‘ভারত গৌরব পণ্ডিত তারানাথ’ প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। এই লেখাটি এই গ্রন্থে সংযোজিত করা হয়েছে। কৃতজ্ঞতা জানাই পল্লীবাসী পত্রিকার সম্পাদক শ্রী তরুণ সেন মহাশয়কে। তার পল্লীবাসী পত্রিকায় ”একটি চিঠি” বিভাগে (২০/১০/১৪) তারিখে শ্রী সুধীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের একটি লেখা প্রকাশিত হয়, তারানাথ তর্কবাচস্পতির উপর। ওই চিঠিটি বর্তমান গ্রন্থের ভুমকায় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া “স্মরণে মননে দ্বিশত জন্মবর্ষ অতিক্রান্ত : ভারত গৌরব তারানাথ তর্কবাচস্পতি” শীর্ষক অধ্যাপক কল্যান ভট্টাচার্যের একটি লেখা প্রকাশিত হয়। ওই লেখাটি গ্রন্থের “মুখবন্ধ”-এ লিপিবদ্ধ রয়েছে। বিশেষ এবং বিরল সারস্বত প্রতিভার অধিকারী পণ্ডিত তারানাথ তর্কবাচস্পতি-র উপর এই গ্রন্থ নির্মাণ করতে পেরে ঈশ্বরের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার অন্তরাত্মার টানে যে গ্রন্থ নির্মাণের ভাবনায় আমি নিয়মিত ভাবনা ও শ্রম ব্যবহার করতাম আজ তা সম্ভব হওয়ায় আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।
মানবেন্দ্র পাল
১৯২৬ খ্রিঃ ২৩ এপ্রিল কালনা শহরের এক প্রগতিশীল ব্রাহ্ম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সাহিত্যিক মানবেন্দ্র পাল। পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ পাল ও মাতা সুচরিতা পালের কছে থেকেই সাহিত্যিক হওয়ায় বংশগত ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ তিনি পেয়েছিলেন। দেব সাহিত্য কুটির, প্রবাসী, ভারতবর্ষ, মাসিক বসুমতী, দৈনিক বসুমতী, সাপ্তাহিক বসুমতী, শনিবারের চিঠি, গল্পভারতী, কথাসাহিত্য, দেশ, প্রসাদ, শুকতারা, নবকল্লোল সহ সমস্ত প্রথম শ্রেণির সাহিত্য পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। তাঁর লেখা নাটকগুলি ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। বেতারেও তাঁর নাটক প্রচারিত হয়েছে। কালনার এই কৃতী সন্তান মানবেন্দ্র পাল বিশ্বভারতীর গ্রন্থণ বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন। ২০১১ খ্রিঃ ২০ নভেম্বর তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে।
শ্রী যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী
প্রখ্যাত রাঢ় গবেষক শ্রী যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী ১৯৪০ খ্রিঃ ৭ জুন বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার অন্তর্গত শ্রী শ্রী যোগাদ্যা দেবীর সুপ্রাচীন পীঠস্থান হিসাবে পরিচিত ক্ষীরগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলিকাতার সিটি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হওয়ার পর ১৯৬৫ খ্রিঃ United Commercial Bank - এ কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৬৭-তে কর্মরত অবস্থায় এম.কম.পাশ করেন। পরবর্তীকালে ওই ব্যাঙ্কে উচ্চপদস্থ অফিসার পদে আসীন হন। মোট ৩৬ বছরের কর্মজীবনের ফাঁকে এবং অবসর জীবনে লেখেন একাধিক কালজয়ী গ্রন্থ - বর্ধমান ইতিহাস ও সংস্কৃতি (তিন খণ্ড), শ্রী চৈতন্যদেব ও সমকালীন নবদ্বীপ, যুগস্রষ্টা শ্রী চৈতন্য, আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চা ও গ্রন্থপঞ্জী, রাঢ়ের সাংস্কৃতিক ইতিহাস, নবদ্বীপ বিদ্যাসমাজের ইতিহাস, আঞ্চলিক ইতিহাস সাধনা, পদাবলিতে নিমাই সন্ন্যাস, যুগস্রষ্টা শ্রীচৈতন্য। এছাড়া রয়েছে একাধিক সম্পাদিত গ্রন্থ। তাঁর গ্রন্থের সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে - দেশ, আনন্দবাজার, বর্তমান সহ বিভিন্ন প্রথম শ্রেণির বাংলা দৈনিক ও পত্র-পত্রিকায়।
শ্রী সিদ্ধেশ্বর আচার্য
জন্ম ১৯৩৬ সাল। পিতা কলিকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী। সমাজসেবা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, পুনাতত্ত্ব গবেষণায় এবং সর্বোপরি চলচ্চিত্র আন্দোলনে লেখকের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৯৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমাজশিক্ষা সম্প্রসারণ আধিকারিকের পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর কালনা পৌরসভার উপ-পৌরপতির পদ অলস্কৃত করেন। বর্তমানে ‘সিনে সোসাইটি’ কালনার সম্পাদক ও কালনা মহকুমা ইতিহাস ও পুরাতত্ত্বটা কেন্দ্রের সভাপতি পদে আসীন আছেন। কালনা ট্যুরিস্ট গাইড (বাংলা ও ইংরাজী), ‘আমার গল্পগুলি’, বর্ধমান জেলা নারী-ইতিহাসের সন্ধানে, ‘চিন্তা-বিচিত্রা’ সহ বিবিধ গ্রন্থ রচনা করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার ও সম্বর্ধনা।
মূল্য : ১২০ টাকা মাত্র(একশত কুরি টাকা মাত্র)